শিবরাত্রির ব্রতকথা (Shivratri Broto Katha) Bengali

❴SHARE THIS PDF❵ FacebookX (Twitter)Whatsapp
REPORT THIS PDF ⚐

শিবরাত্রির ব্রতকথা (Shivratri Broto Katha) Bengali

|| শিবরাত্রি ব্রত কথা ||

পুরাকালের কথা। তখন কৈলাশ পর্বতের শিখর ছিল সর্বরত্নে অলংকৃত। ছিল ছায়াসুনিবীড় ফুলে-ফলে শোভিত বৃক্ষ, লতা ও গুল্ম ঢাকা। পারিজাতসহ অন্যান্য পুষ্পের সুগন্ধে চারদিক থাকত আমোদিত। এখানে সেখানে দল বেঁধে নৃত্য করে বেড়াত অস্পরারা। ধ্বনিত হত আকাশ গঙ্গার তরঙ্গ-নিনাদ। ব্রহ্মর্ষিদের কন্ঠ থেকে শোনা যেত বেদধ্বনি।

এই কৈলাশশিখরে শিব-পার্বতী বাস করতেন। গন্ধর্ব, সিন্ধ, চারণ প্রভৃতি তাঁদের সেবা করত। পরম সুখে ছিলেন শিব-পার্বতী। একদা পার্বতী শিবকে প্রশ্ন করলেন,

ভগবান, আপনি ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ-দাতা। আপনি কোন ব্রত বা তপস্যায় সন্তুষ্ট হন?
দেবী পার্বতীর কথা শুনে শিব বললেন, দেবী, ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথীর রাত্রিকে শিবরাত্রি বলা হয়। এ রাত্রিতে উপবাস করলে আমি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হই। স্নান, বস্ত্র, ধূপ, পুষ্প ও অর্চনায় আমি যতটুকু সন্তুষ্ট হই তার চেয়ে বেশি সন্তুষ্ট হই শিবরাত্রির উপবাসে।
তিনি আরও বলেন,

ব্রতপালনকারী ত্রয়োদশীতে স্নান করে সংযম পালন করবে। স্বপক্ব নিরামিষ বা হবিষ্যান্ন ভোজন করবে। স্থণ্ডিল ( ভূমি বা বালু বিছানো যজ্ঞবেদী) অথবা কুশ বিছিয়ে শয়ন করে আমার (অর্থাৎ শিবের) নাম স্মরণ করতে থাকবে। রাত্রি শেষ হলে শয্যা ত্যাগ করে প্রাতঃ ক্রিয়াদি করবে অন্যান্য আবশ্যক কার্যাদি করবে। সন্ধ্যায় যথাবিধি পূজাদি করে বিল্বপত্র সংগ্রহ করবে। তারপর নিত্যক্রিয়াদি করবে। অতঃপর স্থণ্ডিলে (যজ্ঞবেদীতে), সরোবরে, প্রতীকে বা প্রতিমায় বিল্বপত্র দিয়ে আমার পূজা করবে। একটি বিল্বপত্র দ্বারা পূজা করলে আমার যে প্রীতি জন্মে, সকল প্রকার পুষ্প একত্র করে কিংবা মণি, মুক্তা, প্রবাল বা স্বর্ণনির্মিত পুষ্প দিয়ে আমার পূজা করলেও, আমার তার সমান প্রীতি জন্মে না।

প্রহরে প্রহরে বিশেষভাবে স্নান করিয়ে আমার পূজা করবে। পুষ্প, গন্ধ, ধূপাদি দ্বার যথোচিত অর্চনা করবে। প্রথম প্রহরে দুগ্ধ, দ্বিতীয় প্রহরে দধি, তৃতীয় প্রহরে ঘৃত এবং চতুর্থ প্রহরে মধু দিয়ে আমাকে স্নান করাবে এবং পূজা করবে। এছাড়া যথাশক্তি নৃত্যগীতাদি দ্বারা আমার প্রীতি সম্পাদন করবে।
হে দেবী, এই হল আমার প্রীতিকর ব্রত। এ ব্রত করলে অপস্যা ও যজ্ঞের পুণ্য লাভ হয় এবং ষোল কলায় দক্ষতা জন্মে। এ ব্রতের প্রভাবে সিদ্ধি লাভ হয়। অভিলাষী ব্যক্তি সপ্তদীপা পৃথিবীর অধীশ্বর হয়।
শিব পার্বতীকে আরও বলেন,
এবার শিবচতুদর্শী তিথির মাহাত্ম্য বলছি, শোন।

একদা সর্বগুণযুক্ত বারাণসী পুরীতে ভয়ঙ্কর এক ব্যাধ বাস করত। বেঁটে-খাটো ছিল তার চেহারা, আর তার গায়ের রং ছিল কালো। চোখ আর চুলের রং ছিল কটা। নিষ্ঠুর ছিল তার আচরণ। ফাঁদ জাল, দড়ির ফাঁস এবং প্রাণী হত্যার নানা রকম হাতিয়ারে পরিপূর্ণ ছিল তার বাড়ি।
একদিন সে বনে গিয়ে অনেক পশু হত্যা করল। তারপর নিহত পশুদের মাংসভার নিয়ে নিজের বাড়ির দিকে রওনা হল। পথে শ্রান্ত হয়ে সে বনের মধ্যে বিশ্রামের জন্য একটি বৃক্ষমূলে শয়ন করলে এবং একটু পরেই নিদ্রিত হল।

সূর্য অস্ত গেল। এল ভয়ঙ্কর রাত্রি। ব্যাধ জেগে উঠল। ঘোর অন্ধকারে কোন কিছুই কারও দৃষ্টিগোচর হল না। অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে সে একটি শ্রীফলবৃক্ষ অর্থাৎ বিল্ববৃক্ষ পেল। সেই বিল্ববৃক্ষে সে লতা দিয়ে তার মাংসভার বেঁধে রাখল। বৃক্ষতলে হিংস্র জন্তুর ভয় আছে। এই ভেবে সে নিজেও ঐ বিল্ববৃক্ষে উঠে পড়ল। শীতে ও ক্ষুধায় তার শরীর কাপঁতে লাগল। এভাবে সে শিশিরে ভিজেই জেগে কাটাল সারা রাত।

দৈববশত সেই বিল্ববৃক্ষমূলে ছিল আমার (অর্থাৎ শিবের) এতটি প্রতীক। তিথিটি ছিল শিবচতুর্দশী। আর ব্যাধও সেই রাত্রি কাটিয়েছিল উপবাসে। তার শরীর থেকে আমার প্রতীকের ওপর হিম বা শিশির ঝরে পড়েছিল। তার শরীরের ঝাঁকুনিতে বিল্বপত্র পড়েছিল আমার প্রতীকের ওপর। এভাবে উপবাসে বিল্বপত্র প্রদানে এবং শিশিরস্নানে নিজের অজান্তেই ব্যাধ শিবরাত্রিব্রত করে ফেলল।

দেবী, তিথিমাহাত্ম্যে কেবল বিল্বপত্রে আমার যে প্রীতি হয়েছিল, স্নান, পূজা বা নৈবেদ্যদি দিয়েও সে প্রীতি সম্পাদন সম্ভব নয়। তিথি মাহাত্মে ব্যাধ মহাপূণ্য লাভ করেছিল। পরদিন উজ্জল প্রভাতে ব্যাধ নিজের বাড়িতে চলে গেল।

কালক্রমে ব্যাধের আয়ু শেষ হল। যমদূত তার আত্মাকে নিতে এসে তাকে যথারীতি যমপাশে বেঁধে ফেলতে উদ্যত হল। অন্যদিকে আমার প্রেরিত দূত ব্যাধকে শিবলোকে নিয়ে এল। আর আমার দূতের দ্বারা আহত হয়ে যমদূত যমরাজকে নিয়ে আমার পুরদ্বারে উপস্থিত হল। দ্বারে শিবের অনুচর নন্দীকে দেখে যম তাকে সব ঘটনা বললেন।

এই ব্যাধ সারা জীবন ধরে কুকর্ম করেছে। জানালেন যম।তার কথা শুনে নন্দী বললেন, ধর্মরাজ, এতে কোন সন্দেহই নেই যে ঐ ব্যাধ দুরাত্মা। সে সারা জীবন অবশ্যই পাপ করেছে। কিন্তু শিবরাত্রি ব্রতের মাহাত্মে সে পাপমুক্ত হয়েছে এবং সর্বেশ্বর শিবের কৃপা লাভ করে শিবলোকে এসেছে।
নন্দীর কথা শুনে বিস্মিত হলেন ধর্মরাজ। তিনি শিবের মাহাত্মর কথা ভাবতে ভাবতে যমপুরীতে চলে গেল।
শিব পার্বতীকে আরও বলেলেন, এই হল শিবরাত্রিব্রতের মাহাত্ম।

শিবের কথা শুনে শিবজায়া হিমালয় কন্যা পার্বতী বিস্মিত হলেন। তিথি শিবরাত্রিব্রতের মাহাত্ম্য নিকটজনের কাছে বর্ণনা করলেন। তাঁরা আবার তা ভক্তি ভরে জানালেন পৃথিবীর বিভিন্ন রাজাকে। এ ভাবে শিবরাত্রিব্রত পৃথিবীতে প্রচলিত হল।

মহাশিবরাত্রি পূজা বিধি

ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথি-ই শিবপুরাণ মতে মহাশিবরাত্রি। তাই ত্রয়োদশী তিথি থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে এই বিশেষ পূজার জন্য। শিবপুরাণ মতে এবং মহাশিবরাত্রি ব্রতপালন বিধি অনুসারে ত্রয়োদশীতে এক বেলা নিরামিষ আহার খেয়ে থাকতে হয়। যাতে চতুর্দশীতে উদরে আহারের কণামাত্রও না থাকে!

  • মহাশিবরাত্রির দিন একেবারে সকালেই ঘুম থেকে উঠে পড়া নিয়ম। ঘুম থেকে উঠেই স্নান করে নিতে হয়। কালো তিল ভেজা জলে স্নান করাই বিধেয়। শিবপুরাণ মতে, তাতে শরীর শুদ্ধ হবে।
  • স্নান শেষ হয়ে গেলে সঙ্কল্পের পালা। কেন না, এই পূজা এবং ব্রত পালন করতে হয় নিজেকে সংযত রেখে। মনে মনে সঙ্কল্প করুন — চতুর্দশীর সারা দিন এবং রাত আপনি শুদ্ধ শরীরে এবং মনে থাকবেন। থাকবেন উপবাসে। সঙ্কল্প হয়ে গেলে “নমঃ শিবায়” বীজমন্ত্রে প্রণাম জানান শিবকে। তাঁর আশীর্বাদ কামনা করুন। যাতে আপনার সঙ্কল্প রক্ষা হয়।
  • অনেকে আজকাল দুপুরের মধ্যেই শিবপূজা সেরে নেন। কিন্তু যখন বলছি মহাশিবরাত্রি, তখনই স্পষ্ট- এই পূজার আদর্শ সময় রাত। সারা রাত ধরে চলে মহাশিবরাত্রির ব্রত। তাই সন্ধেবেলাতেও একবার স্নান করে শুদ্ধ হয়ে পূজার জোগাড় করুন। হাতের কাছে গুছিয়ে রাখুন জল, দুধ, দই, ঘি, মধু, ফুল, বেলপাতা, গোলাপ জল, চন্দন বাটা, কুঙ্কুম বা সিঁদুর, ধূপ, ঘিয়ের প্রদীপ, পাঁচটি ফল, মিষ্টি।
  • মহাশিবরাত্রিকে ভাগ করা হয় চারটি প্রহরে। এক একটি প্রহরে গঙ্গামাটি দিয়ে তৈরি করতে হয় একটি করে শিবলিঙ্গ। খেয়াল রাখুন, এক প্রহরের লিঙ্গের পূজা অন্য প্রহরে করা যায় না। কেন না, প্রহর ভেদে শিবের চারটি রূপের পূজা করা হয় এই রাতে। তবে, গঙ্গামাটি না পেলে বা শিবলিঙ্গ বানাতে না জানলে কালো পাথরের একটিই লিঙ্গ বা বাণলিঙ্গ, নর্মদালিঙ্গ, রত্নলিঙ্গ ইত্যাদি বিহিত আধারে পূজা করা যায়।
  • মহাশিবরাত্রির পূজার প্রথম ধাপ অভিষেক। অর্থাৎ, লিঙ্গকে স্নান করানো। প্রথম প্রহরে ‘ হৌঁ ঈশাণায় নমঃ’ মন্ত্রে দুধ দিয়ে, দ্বিতীয় প্রহরে ‘ হৌঁ অঘোরায় নমঃ’ মন্ত্রে দই দিয়ে, তৃতীয় প্রহরে ‘ হৌঁ বামদেবায় নমঃ’ মন্ত্রে ঘি দিয়ে এবং চতুর্থ প্রহরে ‘ হৌঁ সদ্যোজাতায় নমঃ’ মন্ত্রে মধু দিয়ে স্নান করিয়ে পুজো করতে হয়। এই সময় প্রার্থনা করা হয়‚ হে শিব, তোমাকে নমস্কার। তুমি সৌভাগ্য, আরোগ্য, বিদ্যা, অর্থ, স্বর্গ, অপবর্গ দিয়ে থাকো। তাই এগুলো তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। হে গৌরীপতি, তুমি আমাদের ধর্ম, জ্ঞান, সৌভাগ্য, কাম, সন্তান, আয়ু ও অপবর্গ দাও।
  • অভিষেকের পরে শিবলিঙ্গে চারপ্রহরে চারটি অর্ঘ্য দেওয়া নিয়ম। তার পর, ফুলে সাজিয়ে দিন শিবলিঙ্গ। ফুল এবং মালা দেওয়ার সময়ে উচ্চারণ করুন নমঃ শিবায়।
  • তার পরে চন্দন বাটার প্রলেপ দিন শিবলিঙ্গে। চন্দনের পরে কুঙ্কুম বা সিঁদুরের আলেপন দিন।
2nd Page of শিবরাত্রির ব্রতকথা (Shivratri Broto Katha) PDF
শিবরাত্রির ব্রতকথা (Shivratri Broto Katha)

শিবরাত্রির ব্রতকথা (Shivratri Broto Katha) PDF Free Download

REPORT THISIf the purchase / download link of শিবরাত্রির ব্রতকথা (Shivratri Broto Katha) PDF is not working or you feel any other problem with it, please REPORT IT by selecting the appropriate action such as copyright material / promotion content / link is broken etc. If this is a copyright material we will not be providing its PDF or any source for downloading at any cost.