Bengali Story Book PDF
কামলাং অরুণাচলের ছোট্ট নদী। অনাথ যুবক কোয়ান্সা সেখানে মাছ ধরতে যায় রোজ। শস্যক্ষেত্র পুরো দিন কাজ করলে তবে সে দুবেলা দুমুঠো খেতে পায়,নইলে তা পেটে গামছা বেঁধে শুতে হয়। তবু কিন্তু মাছ ধরাতেই তার আগ্রহ বেশি। সন্ধেবেলা খলুই উঠিয়েই সে আহ্লাদে আটখানা। দুটো অচেনা মাছ ধরা পড়েছে একটা ছোটো আর একটা বড়ো। তক্ষুনি-বাড়ি গিয়ে সে বড়ো মাছটাকে লাউয়ের খোলায় জিইয়ে রাখল, আর ছোটোটা পুড়িয়ে খেয়ে নিল।
পরদিন বিকেলে মাঠ থেকে ফিরে কোয়ান্সা দেখল- ঘরটাতে শুধু কাপড়ই কাপড় কে আনল আত্ত কাপড়! বিস্ময়ে তার চোখ কপালে উঠল। প্রতিদিন মাছটিকে খাইয়ে কোয়ান্সা কাজে যায় আর বিকেলে ফিরে দেখে ঘরভরা ঝলমলে কাপড়ের স্তূপ। এই ঘটনা কী করে ঘটছে তা জানতে একদিন সে বাড়ির কাছেই লুকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর দেখল, মাছটি লাউয়ের খোলা থেকে বেরিয়ে এক ছিপছিপে সুন্দরী মেয়ে হয়ে গেল।
Bengali Story Book
তারপর তাতে খটখট্শব্দ করে কাপড় বুনতে শুরু করল। কোয়ান্সা চট করে ঘরে ঢুকেই তার হাত ধরে বলল, “তুমি কে গো? কেথেকে এসেছ? কাপড় বুনতে শিখলে কী করে? এই ফুলগুলোর নকশাই-বা পেলে কোথায়?” মেয়েটি থতমত খেয়ে বলল, “আমি হামব্রুমাই, হামব্রুফৈদের মেয়ে । বাড়ি কামলাঙে। আদিমানবী নিমকে আমাকে কাপড় বুনতে বলেছেন। আর ফুলের নকশা কোথায় পেয়েছি? শোনো। ওই যে নদীর ঢেউ, জলের বুদুদ, পাহাড়, গাছপালার শোভা এসব দেখে আমি কাপড়ে ফুল তুলেছি, জলে তিনরঙা সাপ দেখে রঙিন ফুল সাজিয়েছি। আকাশের নানা রং, মেঘের লুকোচুরি খেলা আর মাছের আঁশের ঢেকনাই আমার কাপড়ে ফুল হয়ে ফুটে উঠেছে।”
Bengali Short Story
একটি বিলে অনেক মাছ ছিল। সেই বিলে অনাগতবিধাতা, প্রত্যুৎপমমতি যদ্ভবিষ্য নামে তিনটি বড়ো মাছ বহুদিন ধরে একসঙ্গে বসবাস করছিল। এক অনাগতবিধাতা বিলে সাঁতার কাটছিল। হঠাৎ সে কয়েকজন জের কথা শুনতে পেল ! জেলেরা বলছিল- “এই বিলে বছদিন কোনও মাছ মারা হয়নি, এখানে নিশ্চয়ই অনেক বড়ো বড়ো মাছ আছে। তাই কাল সকালে এসে এই বিলে মাছ মারতে হবে”। এই বলে কথাবার্তা বলে জেলেরা তাদের বাড়ি চলে গেল।
জেলেদের কথা শুনে অনাগতবিধাতার মাথায় বজপাত হল। সে এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে সব মাছকে ডেকে এনে জেলেদের কথাবার্তা সবটাই বিশদভাবে বর্ণনা করে বলল- “তোমরা সবাই হয়ত শুনেছ, কাল সকালে জেলেরা এসে বিলের সব মাছ মেরে শেষ করে ফেলবে। বিপদ আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। তাই আমাদের এখানে আর একমুহূর্তও থাকা উচিত নয়। রাতেই অন্যস্থানে চলে যেতে হবে। কারণ দুর্বল সর্বদা নিজেদের বাঁচিয়ে চলে অথবা সুরক্ষিত স্থানে থাকে “৷
অনাগতবিধাতার কথা শুনে প্রত্যুৎপন্নমতি বলল- “আপনি সত্য কথাই বলেছেন। আমি মনে করি যত শীঘ্র সম্ভব এই বিল ছেড়ে অন্য কোনো খাল-বিলে চলে যাওয়া উচিত। কারণ যার বাঁচার উপায় আছে, সে কেন বিনা কারণে মরতে যাবে?”
অনাগতবিধাতা এবং প্রত্যুৎপন্নমতির কথা শুনে উচ্চস্বরে হেসে যদ্ভবিষ্য বলল- “তোমাদের আলোচনার কথাগুলো আমার খুব ভালো লাগেনি? যখন আয়ু শেষ হবে তখন অন্যস্থানে গেলেও মৃত্যু হবে। কোনো একজনকে বনে বিসর্জন দেওয়া সত্ত্বেও বেঁচে থাকে এবং অপর একজন সুরক্ষিত অবস্থায় ঘরে থেকেও মৃত্যুমুখে পতিত হয়। আমাদের সমাজে কথিত আছে অসুরক্ষিতকে দেবতা রক্ষা ক্রেন, যে নিজেকে সুরক্ষিত মনে করছে তাকেই দেবতা বিনাশ করেন; অন্যের মুখের কথাতেই বাবা-ঠাকুর্দার এই স্থান পরিত্যাগ করে যাওয়া আমাদের জন্য খুব যুক্তিযুক্ত কাজ হবে না। সেজন্য আমি কোথাও যাব না। তোমরা যা ভালো বোঝ তাই করো। “
যদ্ভবিষ্যের এধরনের একগুয়ে মনোভাব দেখে তাকে ছেড়েই অনাগতবিধাতা ও প্রত্যুৎপন্নমতি সপরিবার অন্য বিলে নি চলে গেল। পরদিন সকালে জেলেরা এসে বিলে জাল ফেলল তারা জালে মাছ মেরে সম্পূর্ণ বিলটি খুঁড়ে ফেলল এবং যদ্ভবিষ্যের সঙ্গে অন্য মাছকেও জালে ধরে ঘরে নিয়ে গেল।
জীবনের প্রতি পদক্ষেপে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। বিপদের পূর্বেই সাবধানতা৷ অবলম্বন করে অনাগতবিধাতা এবং প্রত্যুৎপন্নমতি সুখে বেঁচে থাকল। কিন্তু বিপদের কথা না ভেবে একগুঁয়ে মনোভাব নিয়ে স্থান আঁকড়ে থাকার জন্য যদ্ভবিষ্যের বিনাশ হল।